আবাসন ব্যবসায়ীর ‘ভুয়া’ আপসনামায় জামিন নেওয়ার অভিযোগ রাজশাহীতে

Total Views : 81
Zoom In Zoom Out Read Later Print

আবাসন ব্যবসায়ীর ‘ভুয়া’ আপসনামায় জামিন নেওয়ার অভিযোগ রাজশাহীতে

‘আমি থাকলে তোমার টাকা তো পাবাই। ১২ লাখ টাকায় তুমি কোটিপতি হয়ে যাবা? মানুষের মানসম্মান আছে না?’ 

 রাজশাহী ব্যুরো:

আবাসন ব্যবসায় রাজশাহীতে একের পর এক প্রতারণার ঘটনা ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক আবাসন ও রিয়েল এষ্টেট ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হবার পর নড়েচড়ে বসেছে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। চলছে গভীর অনুসন্ধান। ্কাজ করছে দুদকও।এরই মাঝে সম্প্রতি, প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার হওয়া রাজশাহীর গ্রিন প্লাজা রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তাফিজ ‘ভুয়া’ আপসনামা দেখিয়ে আদালতে জামিন নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলার বাদী এজাজুল হক এ দাবি করেছেন। তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে আনবেন বলেও জানিয়েছেন। এজাজুল হকের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। এজাজুল হক বৃহস্পতিবার রাতে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, মোস্তাফিজের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট নিতে তিনি ১২ লাখ টাকা দেন; কিন্তু মোস্তাফিজ চুক্তিপত্রের শর্ত ভেঙে ফ্ল্যাটটি অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দেন। এ কারণে এজাজুল টাকা ফেরত চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন মোস্তাফিজ। এ মামলা দায়েরের পরই মোস্তাফিজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সকালেই তাকে থানা থেকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিকালে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ মোস্তাফিজের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম তার জামিন আবেদন করেন। এ সময় বিচারক মহিদুল ইসলাম আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। এ দিন স্বাধীনতা দিবসের ছুটি থাকার কারণে আদালতের কর্মচারীরা ছিলেন না। আদালতে দায়িত্বে থাকা পুলিশ এ মামলার নথিপত্র আদালতের কাছে উপস্থাপন করে।

আসামির জামিন পাওয়ার কথা শুনে অবাক হন বাদী এজাজুল হক। বুধবার বিকালে তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) আদালত পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে মামলার নথিপত্র তুলে দেখেন, আসামিপক্ষ একটি আপসনামা জমা দিয়েছে। এই আপসনামায় স্বাক্ষর রয়েছে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর। আপসনামাটিতে উল্লেখ আছে, ফ্ল্যাটের ক্রেতা এজাজুল হক চুক্তি বাতিল করছেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী মোস্তাফিজুর রহমান ১০ শতাংশ টাকা কেটে বাকি ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেন। এজাজুলের আর কোনো দাবি থাকল না।

এজাজুল হক বলছেন, তিনি এক টাকাও ফেরত পাননি। কোন আপসনামাও হয়নি। মামলার নথিতে থাকা এই আপসনামাটি ভুয়া। সেখানে থাকা তার স্বাক্ষরটি জাল। তিনি বলেন, আমার নামে ভুয়া আপসনামা আদালতে দেওয়ার কারণে আমি মামলা করব। এজাজুল হক বলেন, আসামি মোস্তাফিজের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম তার পূর্বপরিচিত। মোস্তাফিজকে আদালতে নেওয়ার পর তিনি আপস করার জন্য কয়েক দফা ফোন করেন। আইনজীবী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও এজাজুল হক শোনান। এতে শফিকুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি থাকলে তোমার টাকা তো পাবাই। ১২ লাখ টাকায় তুমি কোটিপতি হয়ে যাবা? মানুষের মানসম্মান আছে না?’ 

এজাজুল বলেন, ‘এই চিটের জন্য আপনি অনুরোধ করছেন কেন?’ একপর্যায়ে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বাদী এজাজুল হককে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে আমি আর রিকোয়েস্ট করব না। তুমি চুপ থাকো। তুমি এই মামলাতে পারলে জেল দিও।’

ভুয়া আপসনামা দিয়ে আসামির জামিন করানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপসনামা আমি দিব কেন? আমার মক্কেল দিয়েছে। আসল না নকল সেটা সে বলতে পারবে। আমি বলতে পারব না।’ জামিন শুনানির আগে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আপসের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।আদালতে নথিপত্র উপস্থাপন করেছিলেন আরএমপির আদালত পরিদর্শকের কার্যালয়ের (জিআরও) বোয়ালিয়া ও মতিহার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান।

আপসনামাটি দেখে তিনি বলেন, ‘এই আপসনামা কাল আসামি মোস্তাফিজের আইনজীবী দিয়েছেন।’ আপসনামাটি জাল, বাদীর এমন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমি বলতে পারব না। এ রকম হয়ে থাকলে বাদী বিষয়টি আদালতের নজরে আনবেন।’ তিনি জানান, ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাজির হওয়ার শর্তে আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। এজাজুল হক মামলা করেন পেনাল কোডের ৪২০, ৪০৬ ও ৫০৬ ধারায়।

রাজশাহী জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী জানান, এই তিন ধারার মধ্যে ৪০৬ ধারাটি অজামিনযোগ্য। তবে বাদীর সঙ্গে আসামির আপস হলে আদালত জামিন কিংবা মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন। আপসনামাটির কারণেই আসামি জামিন পেয়েছেন। এটি ভুয়া হলে মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখে বাদী বিষয়টি আদালতের নজরে আনতে পারেন। মোস্তাফিজুর রহমান রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট। ২০১০ সালের দিকে রাজশাহীতে পলিটেকনিকে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে তিনি এক নিঃসন্তান দম্পতির বাসায় পালক ছেলে হিসেবে আশ্রয় নেন।

২০১৯ সালে তিনি ডেভেলপার ব্যবসায় নাম লেখান। এখন তিনি দামি হ্যারিয়ার গাড়িতে চড়েন। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে তার বিরুদ্ধে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি করেন এজাজুল হক। এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। এ মামলার বাদীর নাম মো. রুবেল। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে মোস্তাফিজ তার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বিষয়গুলো নিয়ে মামলার আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ফোন করা হয়। তবে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

ক্রাইম ডায়রি/ ক্রাইম

See More

Latest Photos