ACC in continuous success: how these operations are carried out
ধারাবাহিক সফলতায় দুদক:যেভাবে চলে এসব অভিযান
ক্রাইম ডায়রি ডেস্কঃ
সারাদেশে একের পর এক ধারাবাহিক অভিযানে সফলতা বয়ে আনছে দেশের সর্ব বৃহৎ ও একমাত্র দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠান দুদক। সম্প্রতি রাজশাহীতে উপ-কর কমিশনারের অফিস ড্রয়ার থেকে দুদক কর্মকর্তারা হাতেনাতে টাকা উদ্ধার করার সময় বিস্মিত হয়েছে দেশবাসী। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের আকস্মিক অভিযানে কর কর্মকর্তার ড্রয়ার থেকে ১০ লাখ ঘুষের টাকা উদ্ধার করা হয়। শুধু তাই নয়, শরীয়তপুরে বিসিক কার্যালয়ে একই ধরনের আরেকটি অভিযান চালায় দুদক। একজন ব্যবসায়ীর অভিযোগের সূত্র ধরে বিসিক কর্মকর্তাকে ৫০ হাজার টাকা 'ঘুষসহ' হাতেনাতে ধরে দুদক।
কিছু সরকারী কর্মকর্তা এভাবে ঘুষের টাকা গ্রহন করে লাখো সৎ কর্মকর্তাদের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন। ফলে উদ্বেগে রয়েছেন দেশে হাজার হাজার সৎ সরকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারী। এখানে হাজার-হাজার কিংবা কখনো লাখ-লাখ টাকা ঘুষের ব্যাপার।
সাধারণ মানুষ তো বটেই, দুর্নীতি নিয়ে যারা কাজ করেন তারাও দুদকের এসব অভিযান ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মত হচ্ছে, এধরনের অভিযান চলমান থাকলে দুর্নীতিবাজদের মনে আতঙ্ক তৈরি হবে। দেদারছে ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে তারা আরো সতর্ক হবে। ফলে একসময় শুন্যে নেমে আসবে অপরাধ ও ঘুষ প্রবণতা।
দুদক বলছে, তারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে এসব অভিযান পরিচালনা করে না। বরং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এ ধরনের অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাই অভিযান কতগুলো হবে সেগুলো নির্ভর করে অভিযোগ পাওয়ার ওপর।
দুদক যেসব দফতরে অভিযান চালায় তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ রেলওয়ে। এছাড়া আরো বিভিন্ন সরকারি দফতরেও অভিযান চালানো হয়।
বিবিসি বাংলা সুত্রে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের হটলাইনে যদি ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন তাহলে সেটি দুদকের তফসিলভুক্ত হলে তার অভিযোগটি যাচাই করা হয়।
হোসেন বলেন, ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো শুরু করে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত ত্রৈমাসিকের তথ্য অনুযায়ী, সেবছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ৪৯১টি অভিযোগের বিষয়ে কাজ শুরু করে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭৪টি অভিযান চালায় দুদক। অভিযানের পর কমিশনের অনুমোদনে অনুসন্ধান হয় ১১টি অভিযোগের।
দুদক সচিব বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তিনি যদি 'স্বভাবজাত অপরাধী' হয়ে থাকেন তাহলে তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়।
"এ সময় যদি দেখা যায় যে, অভিযোগের সত্যতা রয়েছে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি সেটি করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ‘ফাঁদ মামলা’ করা হয়।"ফাঁদ মামলা হচ্ছে, যিনি ভুক্তভোগী তার কাছে যে ঘুষ অভিযুক্ত ব্যক্তি দাবি করেন তাকে তিনি সেটি দেন বা দিতে থাকেন। তখন দুদকের একটি দল তাকে হাতে-নাতে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর ওই ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে আদালতের নিয়মানুযায়ী তার বিচারকাজ পরিচালিত হতে থাকে। তবে মামলা দুদকের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়।
শুরুর দিকে দুদক বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করলেও মাঝে কিছু সময় অভিযানের পরিমাণ বেশ কমে এসেছে বলে জানায় দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংখ্যা দিয়ে হয়তো পরিমাপ করা যাবে না তবে এক সময় দুদকের অভিযানগুলো বেশ ভালোই পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু পরে সেগুলো কমে গেছে এবং এখন মাঝে মধ্যে দেখা যায়।
দুদক সুত্রে জানা যায়, দুদক আসলে স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযান চালায় না। কেউ দুদকের হটলাইনে অভিযোগ করলে সেই অভিযোগ প্রাথমিকভাবে যাচাইয়ের পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযান চালানো হয়। এর জন্য প্রথমে অভিযোগ জানানোটা জরুরি বলে জানান তিনি।
ক্রাইম ডায়রি/ স্পেশাল/ সুত্র: বিবিসি