হোটেল ওয়েটার ফেসবুকে এএসপি জাকারিয়াঃ অবশেষে সিআইডির জালে গ্রেফতার

Total Views : 1,314
Zoom In Zoom Out Read Later Print

ফেসবুকে কাউকে বিশ্বাস করার আগে যাচাই করা ভালো

আরিফুল ইসলাম কাইয়্যুমঃ

অনলাইন যেন প্রতারণার এক সহজ মাধ্যম। রিক্সা ওয়ালাও ফেসবুকে যে কোন নারীকে বিল্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বাড়ি পরিচয় দেয়। দিনমজুরেও এখানে কোটিপতির মেয়ের সাথে প্রেম করে। অপরাধীরাও এখানে অতিভাল মানুষ সেজে ঘাঁপটি মেরে থাকে। তেমনি পুলিশ সেঁজে প্রতারণা করে অনেক মানুষ। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা করতে পারে এমনটি মানুষ কল্পনাও করতে পারেনা। আর এই সুযোগই কাজে লাগায় অপরাধীরা। সম্প্রতি এএসপি জাকারিয়া নামের একটি এফবি একাউন্ট হতে এমন প্রতারণার তথ্য উঠে এসেছে।

অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পুলিশের সাইবার ফরেনসিক এক্সপার্ট এবং এএসপি হিসেবে নিজেকে জাহির করে আসছিলেন  জাকারিয়া। পরে তার প্রতারণা ধরা পড়ে। সেই জাকারিয়া স্কুলের গন্ডি পার হননি ।  চুলের কাট, পোশাক পড়ে নিজেকে খুব সুন্দর ও স্মার্টভাবে সাজিয়ে রাখেন। স্মার্ট এ যুবক রাজধানীর বনশ্রীর ব্লু-অলিভ রেস্টুরেন্টের একজন ওয়েটার। 

ফেসবুকে তার বন্ধুর সংখ্যা পাঁচ হাজার। পুলিশের এএসপি ও সাইবার এক্সপার্ট পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুকে বহু নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। এরপর চলত তার প্রতারণা। ঈদের দিন অনার্স পড়ুয়া এক নারী বন্ধুর সঙ্গে রাজধানীর হাতিরঝিলে দেখা করতে আসে সে। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারের জালে ধরা পরেন প্রতারক জাকারিয়া।

অনলাইনে নিজেকে এএসপি পরিচয় দেওয়া জাকারিয়া অফলাইনে দেখা করতে আসে এরপর বেরসিক সিআইডির কাছে গ্রেফতার হয়।  শুক্রবার ,২১ মে,২০২১ইং সিআইডির সাইবার পুলিশের বিশেষ সুপার (এসএসপি) রেজাউল মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর বনশ্রীর  ব্লু - অলিভ রেস্টুরেন্টের একজন ওয়েটার জাকারিয়া। ড্রেসআপে, স্মার্টনেস ও সুদর্শন চেহারা দেখে হোটেল ম্যানেজার তাকে ফুডপান্ডা, উবার ইটস প্রভৃতি অনলাইনে খাবার অর্ডারের জন্য কাজ দেন। এর জন্য তাকে স্যামসাংয়ের একটি ট্যাব দেওয়া হয়। সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে কোনো রকম জীবন চলে তার। এরপর অনলাইনে যোগাযোগ হয় চট্টগ্রামের আবির নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার পরামর্শে ফেসবুকে নিজেকে বদলে ফেলেন জাকারিয়া।

তিনি জানান, জাকারিয়া ফেসবুকে নিজেকে জাহির করেন যে তিনি একজন সাইবার ফরেনসিক এক্সপার্ট। ক্রিমিনাল জাস্টিসে ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেছেন। এছাড়াও চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিগ্রি নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন এ প্রতারক। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে প্রতিনিয়ত সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের ফেসবুক পেজ ফলো করতেন। ফেসবুকে নারী বন্ধুদের কাছে নিজেকে এএসপি পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করতেন। এছাড়া পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের ফেসবুকে যুক্ত হন। নিয়মিত পোস্ট দেওয়াসহ বিভিন্ন শুভেচ্ছা ও মেসেজ দিয়ে আসছিলেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি নিজেকে পুলিশের এএসপি পরিচয় দিয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তখন সিআইডির সাইবার পুলিশে সেন্টারের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা সাজার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে প্রতারক জাকারিয়া রিমান্ডে সিআইডির হেফাজতে রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিআইডি সুত্রে জানা গেছে এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে সাইবার পুলিশের অভিযান অব্যহত থাকবে।

ক্রাইম ডায়রি//  অপরাধজগত

 

See More

Latest Photos